এস এ মাসুদ রানা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি -ঃ ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে ২৩ জুলাই থেকে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। আজ রোববার (২৪ জুলাই) বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। স্বাগত বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে দেশের উন্নয়ন বিষয়ক একটি তথ্য চিত্রও প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মৎস্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুষ্ঠানে জাতীয় মৎস্য পদক-২০২২ দেয়া হয়েছে। ৯ ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক পুরস্কার পর্বটি সঞ্চালনা করেন।
মাছের গুণগতমানের পোনা উৎপাদনের জন্য দিনাজপুর বিরামপুরের তাজ এগ্রো ফার্মের স্বত্তাধীকারী আবু সালেহ মোঃ তারেক (এলিন) কে অনুষ্ঠানে জাতীয় মৎস্য স্বর্ণপদক-২০২২ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বিরামপুর ডিগ্রী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ একেএম শাহজাহান এর ছোট ছেলে এবং সাংবাদিক এএসএম আলমগীর এর ছোট ভাই।
স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এলিন তারেক বলেন, “দেশী প্রজাতি মাছের রেনু থেকে পোনা (রুই জাতীয়, শিং, পাবদা ও গুলশা) উৎপাদনের জন্য আজকে এই পুরস্কার পেয়েছি। এই স্বীকৃতি অর্জনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক (এম.পি), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত সচিব দিনাজপুর জেলার সাবেক ডিসি আবু নঈম মোহাম্মদ আব্দুছ সবুর, বিরামপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার পরিমল কুমার সরকার, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কাওসার হোসেন, তাজ এগ্রো ফার্ম এর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পারিবারিক এবং সামাজিক সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের”।
স্বপ্নবাজ এলিন তারেক সফল মাছ চাষে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি অত্রাঞ্চলের প্রান্তিক খামারীদের মাছ চাষ সম্প্রসারণ, উদ্বুদ্ধকরণ এবং উন্নয়নে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়ানো স্বপ্নবাজ তরুন , যিনি আর্থসামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র চাষীদের সাফল্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর খামারে ১২ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জানা যায়, এ.এস.এম তারেক এলিন ২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার বিনাইল গ্রামে তাজ এগ্রো ফার্ম প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন শেষে নিজ গ্রামে তাজ এগ্রো প্রতিষ্ঠা করেন। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার প্রয়াসে চাকরির পিছনে না ছুটে গুড একোয়া কালচার পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তি এবং গুড একুয়া কালচার পদ্ধতি অনুসরণ করে রেনু থেকে গুনগত মানের দেশীয়জাতের পোনা উৎপাদন এবং বিপণন করে থাকেন। তাজ এগ্রো শুধুমাত্র পোনা উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয় মাছ বিক্রয় পরবর্তী প্রান্তিক খামারিদের মাছ উৎপাদন সম্প্রসারণে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকেন। গত ৮ বছর থেকে তাজ এগ্রো প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ২০০ এর বেশি খামারিকে তাদের মাছের গুনগত মানের দেশীয় পোনা সরবরাহ এবং বিক্রয় পরবর্তী মাছ চাষ সম্প্রসারনে সেবা প্রদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
এছাড়াও তাজ এগ্রো ফার্ম বিলুপ্তপ্রায় মাছ চিতল মাছকে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে দিনাজপুর অঞ্চলে চাষ উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাজ এগ্রো ফার্ম বর্তমানে ১৪ টি পুকুরে দেশীয় প্রজাতির রুই, মৃগেল, কাতল ছাড়াও সিলভার, বিগহেড, পুঁটি, বাটা, সরপুঁটি গ্লাসকাপ, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, টেংরা মাছের পোনা উৎপাদন ও বিপণন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০-২১ সালে ৪ হেক্টর পুকুরে দেশীয় প্রজাতির গুনগত মানের প্রায় ৪৬ লক্ষ পোনা (১টি সেড) উৎপাদন করেছে। বছরে এভাবে ৩ টি সেডে এই পোনা মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।
পার্বতীপুর মৎস্যবীজ হ্যাচারির তথ্যমতে, তাজ এগ্রো ফার্ম গত কয়েক বছর থেকে দিনাজপুর জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ দেশীয় মাছের রেনু সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান।
এ প্রসঙ্গে বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কাওসার হোসেন বলেন – “তাজ এগ্রো ফার্ম আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে রেণু থেকে সর্বোচ্চ পোনা উৎপাদন করে থাকে যা রোগমুক্ত এবং গুণগতমান উন্নত হওয়াই মৎস্য খামারিদের নিকট গ্রহণযোগ্য সর্বাধিক”।