1. crimeletter24@gmail.com : crimelet_crimelet :
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মুন্সিগঞ্জ শিলই স্কুলের নতুন কমিটি নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান এর অভিযোগ পঞ্চগড়ে ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট, জরিমানা, ও ভাংচুর বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারক লিপি প্রদান ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন বাতিল করল সরকার পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ আদমদীঘিতে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা তানোরে বিএনপির ইফতার মাহফিলে  দু’গ্রুপের সংঘর্ষ আহত ৫ গলাচিপায় অবৈধ ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন সিলেট-৪ আসনে বিএনপির ৭ জামাতের ১ ও খেলাফত মজলিসের ১জন গলাচিপার চিকনিকান্দী ইউনিয়নে গনঅধিকার পরিষদের ইফতার ও মিলাদ অনুষ্ঠিত মুন্সিগঞ্জ সদর ওসি মহোদয় এর সাথে শহীদ জিয়া পরিষদের সভাপতি সাক্ষাৎ

আবরার হত্যার ৫ বছর, ছেলের আম্মু আম্মু ডাক এখনো কানে বাজে’

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭৫ ০৫ বার পঠিত

সামরুজ্জামান (সামুন), কুষ্টিয়াঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্যাতনে ২০১৯ সালের (৬ অক্টোবর) রাতে নিহত হন আবরার ফাহাদ। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। পাঁচ বছর ধরে আবরারের বিভিন্ন স্মৃতি আঁকড়ে রেখেছে পরিবার। 

সোমবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের পাশে আবরারের বাড়িতে গেলে মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। বাড়িতে তিনি একাই ছিলেন। আবরারের একমাত্র ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বুয়েটে যন্ত্র কৌশলে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুয়েটে কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ ঢাকায় গেছেন।

কথা হলে অশ্রুসিক্ত চোখ আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে এই দিনে ছেলেকে সকালে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলাম। বিকেলে বুয়েটে পৌঁছায়। এরপর তাঁকে ছাত্রলীগের ছেলেরা ডেকে রাতভোর নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। তাঁরা ছাত্রলীগ করলেও তারই কয়েকজন বন্ধু ছিল। তাঁরাও একটি বারের জন্যও ফোনে জানায়নি ছেলে নিহত হওয়ার বিষয়ে।’ 

আবরারের মা শোকেস থেকে একটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন বের করে দুই হাতে নেড়েচেড়ে বলেন, ‘এগুলো ছেলের। যত্নে রেখেছি আজও।’ সেগুলো আবারও শোকেসের ভেতরে রাখলেন। তিনি আরও বলেন, ‘জানো, আজ যদি আমার ছেলে বেঁচে থাকত তাহলে চাকরি করত। আরও কত কী হতো।’ এভাবেই স্মৃতিচারণ করতে থাকেন মা রোকেয়া খাতুন।

রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘ছেলের আম্মু আম্মু ডাক এখনো কানে বাজে। ভুলতে পারি না। কীভাবে ভুলব? এই সন্তানকে ভোলার নয়। তাঁকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটা মনে হলেই শিউরে উঠি। তাঁর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকা।’ 

তিনতলার বাড়ির নিচতলাতে থাকে আবরারের পরিবার। একটি কক্ষে বেশ পরিপাটি করে সাজানো। খাটের একপাশে বড় একটি শোকেস। সেটির পাশে দাঁড়িয়ে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘ছেলে বুয়েটে যে বিছানায় থাকত। সেখান থেকে সবকিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন নেওয়া হয়েছে।’ 

শোকেসের ভেতর হাতঘড়ি থেকে শুরু করে ব্যাগ বইপত্র, প্রসাধনী, আইডিকার্ডসহ আরও অনেক কিছুই যত্নে রেখেছেন। জুতা, একটি গ্লোব, পোশাক, জায়নামাজ ও তাসবিহ রয়েছে। কিছু চকলেট দেখিয়ে আবরারের মা বলেন, ‘আবরার ঘুমানোর সময় চকলেট মুখে দিয়ে ঘুমাত।’ এইগুলো পাঁচ বছর ধরে আগলে রেখেছেন তিনি। হাতঘড়ির কাটা বন্ধ হয়ে গেছে। সেটিও দেখালেন আর তিনি বললেন, ‘আর কতদিন চলবে।’ 

রোকেয়া খাতুন জানান, আবরার সব সময় দেশের ভালোর জন্য লিখতেন। দেশ নিয়ে ভাবতেন। দেশের স্বার্থে ভালো কিছু লিখেই তিনি একটি দলের কাছে শত্রু হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আবরার কোনো রাজনীতি করত না। তাহলে কেন তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর যারা হত্যা করল তারাতো তারই বন্ধু ছিল। তারা কী দেশের ভালো চাইতো না?’ 

আবরারে মা বলেন, ‘হত্যা মামলার রায় হয়েছে। আসামিদের ফাঁসি হয়েছে। কেউ কেউ পলাতক রয়েছে। সব আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের জোর দাবি জানাই।’ 

রোববার রাত ১০টার দিকে আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন ‘২০১৯ সালের আজ অর্থাৎ ৬ অক্টোবর ভাইয়া ঢাকাতে যায়। ২৬ সেপ্টেম্বরে কুষ্টিয়াতে আসার পরেই ইলিশ আর ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দুটি পোস্ট দিয়েছিল। সেদিন আম্মু নিজে ভাইয়াকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসছিল। এরপর মাত্র ১৩-১৪ ঘণ্টার মধ্যে ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। আর ২০ ঘণ্টা পরই বাসায় আসে মৃত্যুর সংবাদ।’ 

আবরার ফাইয়াজ ফেসবুক পোস্টে আরও লেখেন, ‘সেদিন সকালে যাওয়ার আগে ৯টার দিকে আম্মু আমাকে ডেকে বলেছিল “ভাইয়া চলে যাচ্ছে, ওঠ। ”কিন্তু ভাইয়া বলে, “না থাক, অনেক রাতে ঘুমাইছে ঘুমাতে দেও। আমি চলে গেলাম। তুই বেশি দিন থাকিস না তাড়াতাড়ি ঢাকা চলে আসিস। ”যাওয়ার আগের রাতে আম্মুকে ভাইয়া বলেছিল, “আম্মু অনেক ছারপোকা কামড়ায়। পিঠে একটু হাত বুলিয়ে দেও তো। কোনো দাগ হয়ে গেছে নাকি। আচ্ছা তোমার কাছে কী এমন কোনো ওষুধ আছে যা লাগালে আর কামড়াবে না আমাকে?’ ” 

মোবাইল ফোনে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ জানান, তিনি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার চেয়েছেন। এ ছাড়া যেসব আসামি কারাগারে রয়েছেন তাঁদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। 

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। রাত ১০টা থেকে একটানা রাত ২টা পর্যন্ত আবরারকে শিবির সন্দেহে পেটানো হয়। ক্রিকেট স্ট্যাম্প, স্কিপিং দড়ি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। কিলঘুষি, লাথিও মারা হয়। রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ