নাজমুল হক, সম্পাদক ও প্রকাশক -ঃ
নানান বাঁধা বিপত্তি, প্রতিকুলতা ও দেশী- বিদেশী চক্রান্ত পিছনে ফেলে পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে কালের স্বাক্ষী হয়ে রইল, আমরাও পারি। সততা, দেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়প্রত্যয় থাকলেই একমাত্র সম্ভব এত বড় অর্জন। দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে জাতি এক স্বপ্ন চুড়ায় অবস্থানের জানান দিল। আজ আনন্দে উত্তাল সারা দেশ, আমাদের টাকায় আমাদের সেতু, এটাই আমাদের অহংকার।
বহু কাঙ্ক্ষিত সেই সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতে তিনি দেশবাসীকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানান।
শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানানোর পর বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে সে কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষকে স্যালুট জানাই।’
৯ টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে মাওয়া সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছান । মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে ভাষণ শেষে তিনি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়। আজ ২৫ জুন ২০২২ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের জনমানুষের হৃদয়ের মনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বের ১০তম দীর্ঘ সেতুর পুরো নাম ‘পদ্মা বহুো মুখী সেতু’। সেতুটি নির্মাণের জন্য ৯১৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। এই সেতুর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। সেতুর নকশা প্রণয়ন করেছে আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম AECOM। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার , প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার।
নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্ব পালন করছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
প্রতিদিন গড়ে ৭৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। ভূমিকম্প সহনশীল মাত্রা ৯। সেতুটির ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার এবং পিলার ৮১টি। মোট স্প্যান সংখ্যা ৪২। প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং প্রতিটি স্পেনের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। সেতুর স্থানাঙ্ক ২৩.৪৪৬০ ডিগ্রি(উত্তর) এবং ৯০.২৬২৩ ডিগ্রি (পূর্ব)। পানির স্তর থেকে এই অত্যাধুনিক সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট এবং এর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট। সেতুর উপরের তলায় চার লেনের সড়ক এবং নিচতলায় থাকবে রেললাইন। সংযোগ সড়ক হচ্ছে জাজিরা ও মাওয়া। সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। দুই পাড়ে নদী শাসন ১২ কিলোমিটার। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯টি জেলার সঙ্গে সংযোগ ত্বরান্বিত হবে।
জাতির গৌরবের প্রতীক ‘পদ্মা সেতু’র উদ্বোধন উপলক্ষে ১০০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট মুদ্রণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আগামী ২৬ জুন (রোববার) থেকে নতুন এ স্মারক নোট বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস এবং পরে অন্যান্য শাখা অফিসে পাওয়া যাবে।