নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় নারীদের “কত টাকা পূঁজি আছে বা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা নয়, বরং একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় মূলধন তার নতুন কিছু
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভূমিহীনতা ও দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশী নারীরা কিছুকাল আগেও ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসতে এবং অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে সক্ষম ছিলেন না। এ দেশের সিংহভাগ নারী কেবল দরিদ্রই নন, তারা শতাব্দীপ্রাচীন প্রথা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিগড়ে আবদ্ধ; যাদের কাছে আশা করা হয় যে তারা গার্হস্থ্যকর্মের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করবেন। কেবল সন্তান জন্মদান ও লালনপালনকেই এ সমাজে নারীর একমাত্র কাজ বলে ধরে নেয়া হয়। বিগত বছরগুলোয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষায় অগ্রগতি, সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ওপর যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সম্প্রদায়কে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রেখে এবং ক্ষমতায়নের সুযোগ না দিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। একটি সমাজ কেবল লিঙ্গের ভিত্তিতে তার একটি অংশকে বঞ্চিত করে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারে না। এ উপলব্ধি থেকে সরকার যেমন নারীদের উদ্যোগ গ্রহণের দক্ষতার ওপর জোর দিয়ে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপযোগী জাতীয় নীতিকৌশল প্রণয়ন করেছে, অন্যদিকে শিক্ষা প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমে নারীরাও নিজেদের কাজে নিয়োজিত করে পরিবারে ও সমাজে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন। আর এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এখন নারীরা উপার্জনের জন্য ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসছেন। এ উপার্জনের অন্যতম প্রধান নিয়ামকই ব্যবসা। বাংলাদেশের বাস্তবতায় নারী উদ্যোক্তা হওয়া একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ, যেহেতু এ দেশে নারীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পিছিয়ে আছেন। আমরা জানি, নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে নিরক্ষরতা, অসচেতনতা, অসংগঠিত থাকার কারণে ক্ষমতাহীনতা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পুঁজির অভাব, অনমনীয় সামাজিক প্রথা, ধর্মীয় কুসংস্কার, স্বামী বা অন্যান্য পুরুষের কাছ থেকে সহযোগিতার অভাব ইত্যাদি। সুখবর হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ক্রমেই একটি শক্তিশালী আর্থসামাজিক ধারায় রূপ নিচ্ছে। জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই দেশে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটি অনস্বীকার্য, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য নিরসন ও নারী ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তারা শক্তিশালী অবদান রাখতে পারেন। এটাই এখন বাস্তবতা যে আর্থসামাজিক খাতে সফলতার জন্য জেন্ডার সমতা অর্জন প্রয়োজন সর্বাগ্রে। সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ দেশের নারীরা অর্থনীতির সূত্রধরের ভূমিকা পালন করতে পারেন। তবে এ সবকিছুর পরও ব্যবসায় নারীদের অংশগ্রহণের হার এখনো বেশ কম। নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার সৃষ্টিশীল সম্ভাবনার স্ফুরণ ঘটানোর জন্য উদ্ভাবনশীল ও বিশেষায়িত সেবার প্রয়োজন—যদিও সরকার বর্তমানে নারী উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সুযোগ-সুবিধা ও সেবা প্রদানের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছে।
নিজস্ব সৃষ্টির আনন্দ সবসময়ই অতুলনীয়। এই আনন্দ উপভোগ করা, নিজের স্বাধীনতা, নিজের রাজত্বের পাশাপাশি অন্যের জন্য কিছু করার সম্ভাবনা সবসময়ই উদ্যোক্তার থাকে। উদ্যোক্তাই পারে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন একটি উদ্যোগকে
ঘরের শিশু থেকে বয়স্ক ব্যক্তির যত্নআত্তি বা তাদের ভালো রাখার ব্যাপারটির দেখভালের দায়িত্ব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর। তারা কী খাবে, কী পরবে, তাদের কী খেতে ইচ্ছে হয়, কী করতে ইচ্ছে হয়